পঞ্চগড় প্রতিনিঃ একরামুল হক মুন্না :
মালিক-শ্রমিকের সুসম্পর্ক বজায় থেকে দেশের চা শিল্প এগিয়ে যাবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন পঞ্চগড়ের সুরমা এন্ড পুর্ণিমা চা ইন্ডাস্ট্রি মালিক শেখ ফরিদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭-১৯৫৮ সালে চা বোর্ডের প্রথম বাঙালি চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি চা শিল্পের সামগ্রিক উন্নয়ন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যেই শ্রীমঙ্গলে চা গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশে চা শিল্পে সুদূরপ্রসারী উন্নয়নের যাত্রা ও সার্বিক বিকাশের পথ উন্মোচন করেন। তিনি ১৯৭২ সালে রব কমিশন গঠনপূর্বক চা শিল্পের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করেন ও ১৯৭২-৭৪ সালে চা বাগানের বিধ্বস্ত কারখানা চালু করার লক্ষ্যেই ভারত হতে আইডিবিআই ঋণের ব্যবস্থা করে চা শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন। দেশে চা একটি কল্যাণমূলক শিল্পের আদর্শ হিসেবে দেড় শতাব্দীর অধিক সময় ধরে গড়ে উঠেছে। এ শিল্পে নিয়োজিত একজন শ্রমিক নগদ মজুরি এবং দ্রব্য ও অনগদ পারিশ্রমিক বাবদ মজুরি পেয়ে থাকেন যার পরিমাণ মজুরির নগদ অংশের দ্বিগুণের বেশি। স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নারীদের অধিকার ও সম্মান প্রদানে চা শিল্পই প্রথম পদক্ষেপ নেয়। ১৬৮ বছরের পুরোনো শিল্প হিসেবে বাংলাদেশের অন্য যেকোনো শিল্পের তুলনায় অনেক আগে থেকেই শ্রম আইন অনুসরণপূর্বক ৭০ দশকে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ এর মাধ্যমে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সম কাজের জন্য সম মজুরি নিশ্চিত করেছে। দুই দশক আগে শুরু হয়ে চায়ের নীরব বিপ্লবে বদলে গেছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের অর্থনীতি। এক সময়ের চরম দারিদ্র্যে জীবন কাটানো এ অঞ্চলের মানুষ স্বাবলম্বী হয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন গড়ে উঠেছে কর্মসংস্থান একই সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থান। হাজার হাজার অনাবাদি গো-চারণ পতিত জমি হয়ে উঠেছে সমতলের চা ভূ-স্বর্গ। চাঙ্গা অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পর্যটনের নতুনমাত্রা। দুই দশক আগে শুরু হয়ে এখন চা উৎপাদনে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের পরেই পঞ্চগড়ের অবস্থান। পঞ্চগড়ে চা চাষের যাত্রা শুরু ১৯৯৬ সালে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চগড় সফরে এসে চা চাষের সম্ভাবনার কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সে চিন্তার ফসল আজকের এ চা-বাগান। সে সময় তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব মো. রবিউল ইসলামের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষামূলকভাবে চা চাষ শুরু হয়। প্রথমে টবে, পরে জমিতে চায়ের চাষ করা হয়। সে সফলতা থেকে পঞ্চগড়ে ১৯৯৯ সালে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা চাষের পরিকল্পনা করা হয়। সে বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট ও বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি বিশেষজ্ঞ দল পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় জরিপ চালিয়ে চা চাষের সম্ভাবনা সম্পর্কে নিশ্চিত হন। জরিপ কমিটি পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রায় ৪০ হাজার একর জমিতে চা চাষের সম্ভাবনা নির্ধারণ করেন।
বাণিজ্যিকভাবে চা-বাগানের যাত্রা ২০০০ সালের দিকে তেঁতুলিয়া টি কোম্পানি লিমিটেড ও কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেটের হাত ধরে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়। ২০০১ সালে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) একটি উপকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে পঞ্চগড়ে মতিয়ার রহমান, সিরাজুল ইসলাম, ইসহাক আলী মন্ডল, আবদুর রহমান ও আবুল হোসেনসহ ছয় থেকে সাতজন ক্ষুদ্র চাষি চা চাষ শুরু করেন। এরপর থেকেই শেখ ফরিদ এর মায়ের ক্ষুদ্র চা বাগান থেকে শুরু হয় তার বড় চা বাগান করার স্বপ্ন। এরপর বড় চা বাগান থেকে শুরু হয় তার চা কারখানা তৈরির স্বপ্ন তাও তিনি পূরণ করেছেন। তার এই সৎ পথচলা ও সূনাম ক্ষুন্ন করার লক্ষ্যে একটি চক্র তার চা ফ্যাক্টরির নাম দিয়ে চা পাতার বস্তার মোরগ নকল করে চোরাই পথে চা বিক্রয় করছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এদিকে সুরমা এন্ড পুর্ণিমা চা ইন্ডাস্ট্রি মালিক শেখ ফরিদ জানান, চা শিল্পে উৎপানদনশীলতা বৃদ্ধি করার বিকল্প নেই, এই লক্ষ্যে শ্রমিক-মালিককে একসাথে কাজ করতে হবে এবং সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রথমে দেড় একর বাগান লাগাই । বর্তমানে আমার ১০ একর চা বাগান রয়েছে। এর পাশাপাশি একটি চা কারখানা আছে। ভালো কাজ করলে শত্রু হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে
আল্লাহ ছাড়া আমার সন্মান ক্ষুন্ন করার ক্ষমতা করো নাই।
বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের কৃষিবিদ মোঃ আমির হোসেন বলেন, সুরমা এন্ড পুর্ণিমা চা ইন্ডাস্ট্রি করার জন্য ১ জুলাই ২০২০ অনুমোদন পায়। এরপর ৬ মে ২০২১ চালু হয়। বর্তমান দুই লাইন ফ্যাক্টরি । গত ২২ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর চা উৎপাদন করেন ৫ লক্ষ ১৯ হাজার ১৫০ কেজি। ২৩ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত চা উৎপাদন করেন ২ লক্ষ ৩৮ হাজার ২৬৩ কেজি। তিনি আরো বলেন সুরমা এন্ড পুর্ণিমা চা ইন্ডাস্ট্রি এর বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমার নিকট কোন প্রকার অভিযোগ পাওয়া যায় নাই অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।
Leave a Reply